জবি ছাত্রদল নেতা হাসিবের অকাল মৃত্যু, চরফ্যাশনের জন্মভূমিতে হাজারো মানুষের অশ্রু ভেজা বিদায়

এম রিয়াজ উদ্দিন

ঢাকার ব্যস্ত নগরজীবনে হঠাৎ থেমে গেল এক সংগ্রামী তরুণের জীবন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. হাসিবুর রহমান খান (২৭) শুক্রবার রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাত আনুমানিক ৯টার দিকে পুরান ঢাকার একটি রেস্টুরেন্টে বন্ধুদের সঙ্গে নাস্তা করতে গেলে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন হাসিব। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা জানান, তিনি আর বেঁচে নেই। মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই হাসপাতালে ভিড় করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। কান্নায় ভেঙে পড়েন সবাই।‌ রাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম জানাজা। সেখানে অংশ নেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতা, সহপাঠী, শুভানুধ্যায়ী ও সহযোদ্ধারা। জানাজা শেষে তাঁর মরদেহ নেওয়া হয় ভোলার চরফ্যাশনে নিজ গ্রামের বাড়িতে।

শনিবার (৪ অক্টোবর) দুপুর ২টায় চরফ্যাশন উপজেলার নজরুল নগর ইউনিয়নের মাঝের চর ফাজিল মাদরাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় জানাজা। জানাজায় অংশ নেয় শত শত মানুষ পরিবার, প্রতিবেশী, সহপাঠী, রাজনৈতিক সহকর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। জানাজা শেষে মাদরাসা সংলগ্ন পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

১৯৯৮ সালে ভোলার চরফ্যাশনে জন্মগ্রহণ করেন হাসিব। শৈশবেই তার মাঝে নেতৃত্বের বীজ দেখা যায়। প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ঢাকায় এসে বায়তুল মা’মুর মাদরাসা থেকে এসএসসি এবং ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ভর্তি হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে ১২ তম আবর্তনে। অনার্স শেষ করে মাস্টার্সের শেষ সেমিস্টারে অধ্যয়নরত ছিলেন তিনি।

রাজনীতির মঞ্চে হাসিব ছিলেন এক সাহসী ও আপসহীন কণ্ঠস্বর। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের বিভিন্ন আন্দোলনে ছিলেন সম্মুখ সারিতে। বহুবার নির্যাতন, গ্রেফতার, মামলার মুখোমুখি হয়েছেন, তবুও পিছু হটেননি।

তার বড় ভাই বলেন, “হাসিব শুধু আমাদের পরিবারের নয়, গোটা ছাত্র সমাজের এক সাহসী নাম। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একজন সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসেবে সে ছিল অদম্য। আজ সে আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেল। এই শোক কোনোদিন কাটবে না।”

এ দিকে হাসিবের মৃত্যুতে ভোলা, ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসমূহ গভীর শোক প্রকাশ করেছে। ছাত্রদলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, “হাসিব ছিলেন আদর্শবান, কর্মঠ ও ত্যাগী একজন নেতাকর্মী। তার মৃত্যুতে ছাত্রদল এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎকে হারাল।”

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে শোক জানিয়ে লেখেন, “হাসিব ভাই চলে গেলেন, কিন্তু তার আদর্শ, স্পষ্টভাষী নেতৃত্ব আর সাহস আমাদের মাঝে চিরজীবী হয়ে থাকবে।”

প্রতিদিন যারা রাজপথে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ান, তাদের অনেকেই চলে যান অকালে-নীরবে। হাসিব তেমনই একজন। যিনি ছাত্ররাজনীতিকে নিজের বিশ্বাস ও আদর্শে ধারণ করেছিলেন। তাঁর এভাবে হঠাৎ চলে যাওয়া আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সত্যিকারের নেতারা জন্মান, সংগ্রাম করেন, ত্যাগ স্বীকার করেন—এবং একদিন চিরতরে বিদায় নেন। তবে তাঁরা হারিয়ে যান না, থেকে যান ইতিহাসের পাতায়।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
3,912FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles