লোহাগড়া ভূমি অফিসে দুর্নীতির অভিযোগ: নাইট গার্ড থেকে নাজির সাইদুর রহমানের ‘প্রশাসনিক লাফ’

খন্দকার ছদরুজ্জামান,নড়াইল জেলা প্রতিনিধি

নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলা ভূমি অফিসে এক নাইট গার্ডের অস্বাভাবিক প্রশাসনিক পদোন্নতি ও ভূমি রেকর্ড সংশোধনে ভয়াবহ অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সাবেক নাইট গার্ড সাইদুর রহমান বর্তমানে ওই অফিসে প্রশাসন শাখার নাজির হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার, জমি সংক্রান্ত দুর্নীতি ও সরকারি অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত।

সাইদুর রহমানের পেছনের গল্প: দালাল থেকে ‘নাজির’ বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, সাইদুর রহমান তার কর্মজীবন শুরু করেন সেটেলমেন্ট অফিসের একজন ‘পরচা দালাল’ হিসেবে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি সাধারণ জনগণের জমির পরচা উঠিয়ে দিয়ে আর্থিক লেনদেন করতেন। পরবর্তীতে তিনি লোহাগড়া উপজেলা ভূমি অফিসে সাধারণ শাখার নাইট গার্ড হিসেবে দীর্ঘদিন চাকরি করেন।

এখানেই শেষ নয়। অভিযোগ রয়েছে, তিনি বয়স জালিয়াতি করে উন্মুক্ত বিভাগ থেকে এসএসসি পাশের সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেন এবং পরবর্তীতে ইউএনও অফিসের সিএ (কনফিডেনশিয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট) পদে কিছু সময় দায়িত্ব পালন করেন। এরপর হঠাৎ করেই, কোনো প্রকাশ্য প্রতিযোগিতা বা চাকরির প্রক্রিয়া ছাড়াই তিনি প্রশাসন শাখার নাজির পদে আসীন হন। এ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনিক মহলে ও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে।

ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, নাজির সাইদুর রহমান ভূমি রেকর্ড সংশোধনের কাজে ব্যাপক অনিয়ম করেছেন। কাশিপুর ইউনিয়নের সারুলিয়া মৌজার আরএস খতিয়ান নং ৩০ সংশোধনের ক্ষেত্রে ডিসিআর (ডুপ্লিকেট কার্বন রশিদ) ছাড়াই রেকর্ড সংশোধন করা হয়েছে। এ ধরনের সংশোধনে সরকারি কোষাগারে রাজস্ব জমা না দিয়ে, তিনি ব্যক্তিগতভাবে টাকা গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

একাধিক জমি সংশোধন সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্ত দাবি করছেন স্থানীয়রা। সংশ্লিষ্ট ভূমি পরিপত্র অনুযায়ী, জমির রেকর্ড সংশোধনের সময় আবেদন ফি, কোর্ট ফি ও সংশ্লিষ্ট চার্জ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু এসব বিধান উপেক্ষা করে তিনি নিজ উদ্যোগে রেকর্ড পরিবর্তন করে অর্থ লেনদেন করেছেন।

সাইদুর রহমানের প্রতিক্রিয়া: অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে নাজির সাইদুর রহমান বলেন, “যদি এমন কিছু ঘটে থাকে, তবে সেটি অবশ্যই অপরাধ।” তার এই অস্পষ্ট জবাব থেকেই অভিযোগের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

নড়াইল জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জুবায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন, “যদি কোনোভাবে সরকারি স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়, তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।”

স্থানীয়রা মনে করছেন, একদিকে নাজির সাইদুর রহমানের মতো ব্যক্তির বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত হওয়া প্রয়োজন, অন্যদিকে এর মাধ্যমে গোটা ভূমি প্রশাসনের স্বচ্ছতা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। ভূমি সেবা নিতে গিয়ে সাধারণ মানুষ এখন নিরাপত্তাহীনতা ও হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ।

সরকারি চাকরির সুশৃঙ্খল ও নিয়মানুগ প্রক্রিয়া এভাবে পদদলিত হলে, তা শুধু প্রশাসনের শৃঙ্খলাই ভেঙে পড়ে না, বরং নাগরিক অধিকারও ক্ষুণ্ন হয়। লোহাগড়ায় ‘দালাল থেকে নাজির’ হয়ে ওঠার মতো ঘটনা রোধে দ্রুত প্রশাসনিক ও দুর্নীতি দমন কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এলাকাবাসী।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
3,912FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles