উদ্বোধন করা হল আজ অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী  বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সেতুর।

এইচ এম নাছির,পিরোজপুর  জেলা প্রতিনিধি:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ  সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে উদ্বোধন করেন ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ৮ম বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সেতু। বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের বেকুটিয়ায় কঁচা নদীর উপর নির্মিত এই সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোটি-কোটি মানুষের আরো একটি স্বপ্ন পুরণ হয়ে গেল।
 নদীর পশ্চিম এবং পূর্বপাড়ে দু’টি সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। পশ্চিমপাড়ে পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ও পূর্বপাড়ে সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী পিরোজপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু উপস্থিত ছিলেন।
২০১৩ সালের ১৯ মার্চ পিরোজপুরের এক জনসভায় কঁচা নদীর উপর সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতু নির্মাণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে  ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু এর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন তিনি।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ৮৯৪ দশমিক ০৮ কোটি টাকা ব্যায় করে ১ হাজার ৪৯৩ মিটার দৈর্ঘ্যরে এবং ১৩ দশমিক ৪০ মিটার প্রস্থের এই পিসি বক্স গার্ডার সেতুটির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করেছে। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকার এই সেতুটি নির্মাণে ৬৫৪ দশমিক ৮০ কোটি টাকা প্রকল্প সাহায্য প্রদান করেছে এবং বাংলাদেশ সরকার ব্যায় করেছে ২৩৯ দশমিক ৮০ কোটি টাকা।
চলতি বছরের ডিসেম্বরে এটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ৫ মাস পূর্বেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ শেষ করে সেতু বিভাগের কাছে গত মাসের ৭ তারিখ হস্তান্তর করেন।
 সেতুর পূর্ব প্রান্তে নদীর তীরে ২২০ মিটার দীর্ঘ ও ৫৫ মিটার প্রস্থের বিনোদন এলাকা উন্নয়ন করা হয়েছে। এছাড়া পূর্ব প্রান্তে এপ্রোচ সড়ক সংলগ্ন ৬০ মিটার দীর্ঘ ও ৫ মিটার প্রস্থের বিটুমিনাস সড়ক, এপ্রোচ সড়কের নিচে ৬০ মিটার দীর্ঘ ও ৫ মিটার প্রস্থের কংক্রিট সড়ক এবং পশ্চিম প্রান্তে ১২০ মিটার দীর্ঘ এবং ৩ দশমিক ৫০ মিটার প্রস্থের কংক্রিট সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। ২২০ মিটার নদী শাসনের কাজ করা হয়েছে। এ সেতু প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মাসুদ মাহমুদ সুজন জানান চীনের মেজর ব্রিজ রিকনাইসেন্স এবং ডিজাইন ইন্সটিটিউট কোম্পানি লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে চায়না রেইল ওয়াচ ১৭ ব্যুরো গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড এই সেতুটি নির্মাণ করে।
পিরোজপুরের চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এর সভাপতি জনাব হাবিবুর রহমান মালেক  প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই সেতুটি উদ্বোধনের সঙ্গে-সঙ্গে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরো একটি নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচিত হল। তিনি বলেন দেশের ২য় বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত সাগরকন্যা কুয়াকাটার সঙ্গে বিশ্বের  অন্যতম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ায় এ অঞ্চল দেশ-বিদেশের পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে আর এর প্রাণকেন্দ্র হবে পিরোজপুর। বিভাগীয় শহর বরিশালের সঙ্গে বিভাগীয় শহর ও শিল্পনগরী খুলনার সড়ক যোগাযোগে আর কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। গভীর সমুদ্রবন্দর পায়রার সঙ্গে দেশের ২য় সমুদ্রবন্দর মংলা ও সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হল।
বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মেজর জিয়া উদ্দিন আহমেদ এর ছেলে  বলেন- দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের প্রসার ঘটবে এই বঙ্গমাতা সেতুর মাধ্যমে। তিনি বলেন- পটুয়াখালীর শেখ হাসিনা সেনানিবাসের সঙ্গে যশোর সেনানিবাসের সরাসরি সড়ক সংযোগ স্থাপিত হল।
পিরোজপুর জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী জিয়াউল আহসান বলেন – গতিময় অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে ও প্রাণ-চাঞ্চল্যে ভরপুর হয়ে উঠবে পিরোজপুরসহ পদ্মার এ পাড়ের জেলাগুলো। আমাদের বিভাগীয় শহর বরিশালে যেতে এখন আর ফেরীর অপেক্ষায় দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবেনা।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
3,912FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles